মুন্সিগঞ্জের জলবায়ু সমভাবাপন্ন । তবে আর্দ্রতা ও দূষনযুক্ত এলাকার সংখ্যাও নেহাত কম নয় । এখানকার জলবায়ু ঋতু বিশেষে পরিবর্তনশীল। শীতকালে শীতের তীব্রতা দেশের অন্যান্য স্থানের মতো তত প্রবল নয় । এলাকাটি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলভূক্ত। মুন্সিগঞ্জ জেলার জনসংখ্যা ১২,৯৩,৯৭২ জন।
নাম করণ নিয়ে বিভিন্ন মত বাদ রয়ছে । মোঘল শাসনামলে মুন্সিগঞ্জ এর নাম ছিলো ইদ্রাকপুর । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময়ে রামপালের কাজী কসবা গ্রামের মুন্সী এনায়েত আলীর জমিদারভুক্ত হওয়ার পর তার মুন্সী নাম থেকে ইদ্রাকপুরের নাম মুন্সিগঞ্জ হিসেবে অভিহিত হয় । আবার অনেকের মতে , মোঘল শাসনামলে এলাকার ফৌজদারী আদালতের প্রধান হায়দার আলী মুন্সীর নামানুসারে মুন্সিগঞ্জ নামের উৎপত্তি । আবার অন্য এক জনশ্রুতিতে জানা যায় , শোলঘর ও বজ্রযোগিনী এলাকার মুন্সী উপাধিধারী হিন্দু জমিদারের নামানুসারে এই এলাকার নাম হয় মুন্সিগঞ্জ । প্রাচীনকালে নিঃসন্দেহে মুন্সিগঞ্জ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কেন্দ্র ছিল। অঞ্চলটি খ্রিস্টীয় দশ শতকের শুরু থেকে তেরো শতকের প্রথম পর্যন্ত চন্দ্র, বর্মন ও সেন রাজাদের রাজধানী ছিল। এমনকি সেনদের শাসনামলে, যাঁরা বলতে গেলে প্রায় সমগ্র বঙ্গের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করেছিলেন, মুন্সিগঞ্জ তাঁদের রাজধানী রূপে বলবৎ ছিল এবং নদীয়ায় মুসলমান আক্রমণকারী বখতিয়ার খলজীর হাতে পরাজিত হওয়ার পর লক্ষ্মণসেন এ অঞ্চলে এসেছিলেন । তাঁর দুই পুত্র বিশ্বরূপসেন ও কেশবসেন স্বল্পকালের জন্য এ অঞ্চল শাসন করেছিলেন। বিশ্বরূপসেন ও কেশবসেনের তাম্রশাসনগুলিতে রাজধানী রূপে মুন্সিগঞ্জের উল্লেখ না থাকলেও তাঁরা যে ভূমি দান করেছিলেন তার অবস্থান ছিল মুন্সিগঞ্জ ভাগে । এতে এ অঞ্চলের ওপর তাঁদের কর্তৃত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মুন্সিগঞ্জের খ্যাতি ১২৮০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিক পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ঃ
১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ ছাত্রজনতা সরকারি অস্ত্রাগার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র লুট করে এবং পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে । ৯ মে পাকবাহিনী গজারিয়ায় অভিযান চালিয়ে চার শতাধিক নিরীহ গ্রামবাসিকে গুলি করে হত্যা করে এবং ১৪ মে কেওয়ারে হামলা করে কিছুসংখ্যক যুবককে হত্যা করে । এর আগে ৩১ মার্চ পাকবাহিনী নারায়ণগঞ্জে আক্রমণ চালালে মুন্সিগঞ্জের তরুণরা নারায়ণগঞ্জবাসীদের সঙ্গে মিলিতভাবে আক্রমণ প্রতিহত করে । জুলাই মাসে ধলাগাঁও এলাকায় শত শত যুবককে রিক্রুট করে ট্রেনিং দেওয়া হয় এবং তারা বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেয় । ১১ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা শ্রীনগর থানা, ১৪ আগস্ট লৌহজং থানা নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে টঙ্গিবাড়ী থানা আক্রমণ করে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ হস্তগত করে । মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলার শিবরামপুরে আক্রমণ চালিয়ে পাকবাহিনীর তিনটি গানবোট ডুবিয়ে দেয় এবং এতে বেশসংখ্যক পাকসেনা নিহত হয়। গোয়ালিমান্দ্রায় মুক্তিযোদ্ধারা ৬ জন রাজাকারকে হত্যা করে এবং পরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এক সম্মুখ লড়াইয়ে প্রায় ৩৫ জন পাকসেনা নিহত হয় । পাকবাহিনী শেখর নগর গ্রামের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং নিরীহ লোকদের হত্যা করে। ২৭ রমজান শবে কদর রাতে ১১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা পাকসেনাদের ওপর সম্মিলিত আক্রমণ চালিয়ে মুন্সিগঞ্জ শহর দখল করে নেয়। ৪ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা টঙ্গিবাড়ী থানা দখল করে নেয় এবং ১১ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জ শত্রুমুক্ত হয়।
অর্থনীতি ঃ
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৪.৬৪%, অকৃষি ২.১৭%, শিল্প ৪.৬৯%, ব্যবসা ২৩.১৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৭৫%, নির্মাণ ২.২৭%, ধর্মীয় সেবা ১.১৯%, চাকরি ১২.৮৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৫.৯৫% এবং অন্যান্য ৯.৩%।
অর্থনৈতিক দিক দিয়ে মুন্সিগঞ্জ খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছরে এখানে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় নগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক উদ্যোক্তা সেখানে তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। তাছাড়া সেখানে একটি উন্নত আবাসিক এলাকা তৈরি করা হয়েছে তবে এখনো তারা সবাই প্লট বিক্রি করা শুরু করেনি। অতএব বলা যায় আর কয়েক বছরের মধ্যেই মুন্সিগঞ্জ অত্যন্ত উন্নত নগরী তে পরিণত হবে এবং এদের অর্থনীতির অতি দ্রুত প্রসার ঘটবে।
উৎসব ঃ
লোকসংস্কৃতি দুর্গাপূজা, নববর্ষ, চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে যাত্রা, পালাগান, কবিগান, কীর্তনলীলা, বাউল গানের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। শ্যামসিদ্ধির মেলা এবং ঐতিহ্যবাহী ঝুলন মেলার প্রচলন রয়েছে। এছাড়া রথ যাত্রা, নৌকাবাইচ, লাঠি খেলা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
এই জেলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শনীয় স্থান আছে তার মধ্যে জগদীশ চন্দ্র বসুর জন্মস্থান,অতীশ দীপঙ্করের জন্মস্থান,রাজা শ্রীনাথের বাড়ি,ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি,রামপালে বাবা আদমের মসজিদ,হাসারার দরগা,সোনারং জোড়া মন্দির,পদ্মার চর,ইদ্রাকপুর কেল্লা,
রাজা বল্লাল সেন ও হরিশচন্দ্রের দীঘি, শ্যামসি ।