ভানুয়াতু প্রজাতন্ত্র দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরীক এলাকায় অবস্থিত । ৮৩টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র । এটি হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ৫৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং অস্ট্রেলিয়ার ২৪০০ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে অবস্থিত । ভানুয়াতুর সরকারি নাম রিপাবলিক অফ ভানুয়াতু । দেশ টির পূর্বে অস্ট্রেলিয়া , উত্তর পূর্বে নিউকেলিদোনিয়া ,পশ্চিমে ফিজি , এবং উত্তরে সলোমান দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত ।
পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষের দেশ হিসেবে পরিচিত এই ছোট দ্বীপ ভানুয়াতু ।মেলানেশিয়া দেশ টির মূল অধিবাসী । তবে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো নয় । প্রাকৃতিক সম্পদ নেই বললেই চলে । এরপরও দেশটির মানুষ কেন সুখি এই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের কৌতুহলের শেষ নেই । আসলে এখানে বিনিময়ের মাধ্যম মুদ্রা ততটা গুরুত্ব নয় , এখানকার অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষ পেশা হিসেবে পূর্বপুরুষের জেলে জীবন বেছে নিয়েছে অনায়াসে ।
অধিবাসীরা গরিব কিন্তু কেউ কোনোদিন না খেয়ে থেকে সে তার কোনো নজির নেই । তাহলে জেনে নেওয়া যাক ভানুয়াতু সম্পর্কে আরও কিছু জানা-অজানা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য ।
১২১৮৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ ৭ হাজার । আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১৫৭ তম দেশ । দেশটিতে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১৯.৭ জন মানুষ বাস করেন। ভানুয়াতুর সরকারি ভাষা মোট তিনটি বিসলামা , ইংরেজি ও ফরাসি ।
তবে দেশটির জাতীয় ভাষা হল বিসলামা । দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ এই ভাষায় কথা বলে… ইংরেজি এবং ফরাসি সাধারণত আন্তর্জাতিক এবং পড়াশুনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় । ভানুয়াতুর প্রধান ধর্ম খ্রিস্টান ধর্ম । দেশের প্রায় ৮৩ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টান বাকিদের মধ্যে ৪ শতাংশবৌদ্ধ , তিন শতাংশ মুসলিম এবং ১০ শতাংশ অন্যান্য ধর্মে বিশ্বাসী ।
পোটভিলা ভানুয়াতুর রাজধানী এবং বৃহত্তম শহত। শহরটি আফতের দ্বীপের দক্ষিণ- পূর্ব উপকূলে শেফা প্রদেশ অবস্থিত । অবস্থিত শহরটির আয়তন প্রায় ৫ দশমিক ৩৭ বর্গ কিলোমিটার । শহরটি ভানুয়াতুর অর্থনৈতিক মূল কেন্দ্রবিন্দ । শহরটিতে ভানুয়াতুর এক-পঞ্চমাংশ লোক বসবাস করে ।বর্তমানে শহরটিতে ৫১ হাজার মানুষের বসবাস । এখানে বেশ কিছু হাসপাতাল , বাণিজ্যিক হোটেল, ক্যাসিনো্ বাজার , মাছ মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা , এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিশ্ববিদ্যালয় একটি ক্যাম্পাস অবস্থিত ।
দেশটি মূলত একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুবিদ্যা মান । দেশটির গড় বার্ষিক তাপমাত্রা ২০ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর ভেতরে থাকে । দেশটির মোট ৮৩ টি ছোট বড় দ্বীপ নিয়ে গঠিত । ৮৩ তই দ্বীপ এর মধ্যে ৬৫ দ্বীপে জনবসতি রয়েছে । দেশটির অধিকাংশ দ্বীপ পর্বতময় । রয়েছে অসংখ্য আগ্নেগিরি । কম জনসংখ্যার দেশ ভানুয়াতুর ভাষা বৈচিত্র বেশ অদ্ভুত । ভাষার ঘনত্বের বিচারে এইটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভাষার দেশ ।
এদেশে রয়েছে মোট ১১০ টি ভাষার প্রচলন । রীতিমতো প্রত্যেকটি ভাষায় মানুষ কথা বলে । এখানে গড়ে প্রতি ২ হাজার মানুষের জন্য গড়ে একটি করে ভাষা রয়েছে । ভানুয়াতু বাসির জীবনের সঙ্গে সঙ্গীত আতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। কাঠের খোড়ই যন্ত্র ঘরে ঘরে পাওয়া যায় । অবাক করা বিষয় হলো দেশটিতে কিছুদিন আগ পর্যন্ত মানুষের মাংস খাওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল । কিছু গবেষণায় দেখা যায় কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও এই সংস্কৃতির রয়ে গেছে । এসব কিছু বাদ দিয়ে শহরের যান্ত্রিকতা কিংবা তথাকথিত আধুনিকতা থেকে মুক্ত পৃথিবীর এক প্রান্তে থাকা এই দেশটির সহজ-সরল খোলা মানুষের হৃদয় এই দেশের স্বর্গীয় প্রকৃতি চেয়েও সুন্দর ।
দেশটি স্বাস্থ্যব্যবস্থা মোটামুটি উন্নত হলেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে ন এক বিরাট চ্যালেঞ্জ । দেশের মানুষের গড় আয়ু ছেলেদের ক্ষেত্রে ৬৭ বছর এবং মেয়েদের ৭০ বৎসর । দেশের শিক্ষার ব্যবস্থা উন্নত না । দেশটিতে লিখতে এবং পড়তে পারে এমন মানুষের সংখ্যা ৭৪ শতাংশ । দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম ।
ভানুয়াতু সর্বাধিক প্রিয় খেলা ফুটবল এছাড়া । এছাড়া কিছু ঐতিহ্যগত খেলা রয়েছে । ছোট এই দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে মূলত কৃষি আর পর্যটনের উপর । জনসংখ্যার প্রায় ৮০% মানুষ কৃষি কাজে নিয়োজিত রয়েছে । বছরে ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ দেশটিতে বেড়াতে আসেন । ভানুয়াতুর সরকারি মুদ্রা ভানুয়াতু ভাতু । এক ভানুয়াতু ভাতু সমান প্রায় বাংলাদেশি 74 পয়সার সমান দেশটির মোট জিডিপির প্রায় ৯৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৩৩২৭ মার্কিন ডলার । ভানুয়াতু ডায়ালিং কোড হচ্ছে প্লাস ৬৭৮ ।
খ্রিষ্টজন্মের ১৩০০ বছর আগে দেশটিতে জনবসতি গোত্রের প্রমাণ পাওয়া যায় । অর্থাৎ তিন হাজার তিনশত বছর আগে মেলানেশিয়ারা ভানুয়াতু আবাস গড়তে শুরু করে । এখানে ইউরোপীয়দের আগমন ঘটে ১৬০৬ সালে । তবে ১৮৬৫ সালে আগে কোনইউরোপীয়দের দেশটিতে বসতি গড়ে নি । এরপর ১৮৮০ ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য উভয়ই দ্বীপটির উপর তাদের অধিকার দাবি করে । পরবর্তীতে ১৯০৬ সালে তারা যৌথভাবে দ্বীপটির শাসন করতে সম্মত হয় এবং ১৯৮০ সালে স্বাধীনতা লাভের পর্যন্ত ভানুয়াতু যৌথভাবে ফরাসি এবং ব্রিটিশ শাসনাধীন ছিল । তখন এর নাম ছিল নিউ ইব্রাইউস ।
WOW NICE
ReplyDelete