কবরের জীবন । জীবন _ মৃত্যু _ জীবন


ঘুম থেকে ওঠার পর স্বপ্নের জগৎ টাকে যেমন ঝাপসা মনে হয় মনে হয় বাস্তব মনে হয় আসল সত্য।
 মৃত্যুর পর আপনার মনে হচ্ছে পুরো জীবন টা যেন একটা স্বপ্ন যা আপনি ঘুমন্ত অবস্থায় কাটিয়ে ছিলেন । ফেরেশতাদের সাথে অলৌকিক সব অবস্থার পর আপনি এখন ফিরে এসেছেন আপনার কবরে । আপনাকে মাটি দেওয়া হয়ে গেছে । আপুনি শুনতে পারছেন আপনার কাছের মানুষেরা দোয়া করছেন জিকির করছে, আপনাকে ছেড়ে যেতে চাইছে না । কিন্তু আপনি জানেন তারাও জানে ছেড়ে যেতেই হবে । প্রত্যেক মানুষকে তার ব্যক্তিগত পথ পাড়ি দিতে হবে । কবরস্থান থেকে প্রস্থান করা শেষ মানুষটার পদধ্বনি আপনার কানে পৌঁছায় এরপর সব নিশ্চুপ । একটি মুহূর্ত পার হল না সারা দিন পার হয়ে গেল বোঝা গেল না । কারণ এই জগতের সময় হিসাব মেলানো কষ্ট । হঠাৎ করে আপনি অনুভব করলেন আপনার কবরটা ছোট হয়ে আসছে । মাটি আপনাকে চেপে ধরছে । চিৎকার করে ওঠার আগেই মাটি আপনাকে এমনভাবে চেপে ধরল আপনার মনে হলো আপনার দেহ প্রতিটা অঙ্গ পতঙ্গ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে । এরপরই আপনাকে মাটি ছেড়ে দিলো । এটা কি কবরের আজাব ছিল আপনি কি শাস্তি পাওয়া মানুষের দলে । আপনার মনে পড়ল রাসুল (সাঃ) এর সেই কথা গুলো । তিনি বলেছিলেন মাটি এর চাপ থেকে কেউ যদি বাসত সে হলো সাদ ইবন মুআয (রাঃ) । যে সাদ ইবন মুআয (রাঃ) মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল । যে সাদ ইবন মুআয (রাঃ) জানাজায় শরিক হতে ৭০ হাজার ফেরেশতা পৃথিবীতে নেমে এসেছিল । সে সাদ ইবন মুআয (রাঃ কে ও মাটি চেপে ধরেছিল । কারণ এটাই আল্লাহর হুকুম । আমরা মাটি থেকে এসেছি আর মাটিতেই মিশে যাবো ।

 
এরপর আপনাকে উঠিয়ে বসানো হলো । দেখতে ভয়ঙ্কর দুইজন ব্যক্তি আপনার সামনে উপস্থিত হল । মুনকার-নাকির কাউকে শাস্তি দেয় না তারা নম্রভাবে কথা বলে না । তাদের কর্তব্য একটাই তারা আমাদের পরীক্ষা করবে । অজুহাত দেওয়ার কোন সুযোগ নেই । তারা আপনাকে দেখে বললো, মান রব্বুক ? তোমার রব কে ? তাদের চেহারা দেখে আপনি ভেবেছিলেন আপনার গলা দিয়ে কোন শব্দ বের হবে না । কিন্তু যে আল্লাহকে সারাজীবন বিশ্বাস করেছেন, যে আল্লাহর আদেশ পালন করার সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন , যে আল্লাহর অমান্য করার পর তার কাছে ক্ষমা চেয়ে মাথানত করেছেন সে আল্লাহর পরিচয় জানতে চাওয়ার পর আপনি কি করে চুপ থাকেন । আপনার ঠোঁট আর জিহবা আপনার মস্তিষ্কের কথা চিন্তা না করে বলে উঠল আমার রব আল্লাহ । এরপর তারা প্রশ্ন করলো অমাদীনুক ? তোমার দীন কি ? আপনি বললেন আমার দ্বীন ইসলাম । অবশেষে তারা জিজ্ঞেস করলো তোমার কাছে যাকে পাঠানো হলো তার ব্যাপারে তুমি কী বলো । তার নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে আপনার মুখ হাসি ফেটে গেল, আপনি বললেন তিনি হলেন আল্লাহর বান্দা তার প্রেরিত রাসুল । আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং হযরত মুহাম্মদ ( সা:) তাঁর বান্দা ও রাসূল । সাথে সাথে তারা বলে উঠলো সাদাক তুমি সত্য বলেছ এবং সাথে সাথে আপনার খবরটা প্রশস্ত হয়ে যেতে থাকে । দেখতে না দেখতে আপনার কবরটি বিরাট আকৃতি ধারণ করে । এরপর আপনার সামনে চিত্র তুলে ধরা হয় । এটা কি একটি ভিডিও না কোন আধুনিক প্রযুক্তির আপনার জানা নেই এটা নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই কারণ আপনি হতভম্ব হয়ে দেখতে পেলেন সেখানে একটি ভয়ানক জায়গা দেখানো হচ্ছে । যেখানে চারিদিকে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে এবং হিংসা সব জীব কারো জন্য অপেক্ষা করছে । আপনাকে জানানো হলো এটা আপনার গন্তব্য স্থান হয়ে যেত । যদি আপনি আল্লাহকে অমান্য করতেন । এরপর অন্য দিকে আরেকটি চিত্র ধরা হলো । এবার আপনি আপনার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখতে পেলেন । যার দিকে তাকিয়ে মাসের পর মাস কাটিয়ে দেওয়া যায় । আপনাকে বলা হলো এটাই হবে আপনার শেষ গর্তব্য স্থান , এটাই হলো জান্নাতের সেই ঘর যার জন্য আল্লাহ আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যেখানে আপনি শীগ্রই ফিরে যাবেন । এ মনমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে দেখতে আপনার কবরের জীবন শুরু হয় । কোন একপর্যায়ে আপনার সাথে দেখা করতে আসে আপনার আত্মীয় স্বজনেরা । যারা আপনাকে ছেড়ে অনেক আগে পরপারের পথ পাড়ি দিয়েছিলেন । একবার ভেবে দেখুন কতটা আন্তরিক হবে সেই মিলন । যে মাকে যে বাবাকে যে নানা-নানী দাদা-দাদী কে আপনি কবর দিয়েছিলেন বহু বছর আগে । কবরের জীবনে এসে তাদের সাথে সাক্ষাৎ হবে তারা দুনিয়ার জীবনের খবর জানতে চাইবে । তারা আপনার সাথে গল্প করবে , গল্প করতে করতে আপনার এক বন্ধুর কথা উঠে যায় । তারা বলে অমুক কেমন আছে । আপনি অবাক হয়ে যান , আপনি বলেন অমুক তো আরো তিন বছর আগে মারা গেছে। কেন তোমরা কি তার দেখা পাও নি ? সবাই চুপ হয়ে যায় , সবাই বুঝতে পারে আপনার সেই বন্ধুটি ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারেনি । কবরে আজাব থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেনি । যে ব্যক্তি ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারলোনা , মৃত্যু থেকে জাহান্নাম পর্যন্ত তাঁর পরিস্থিতি কমাগত খারাপ হতে থাকে । যখন তাকে আসমান থেকে জমি নিয়ে ছুড়ে ফেলা হয় যখন মাটি তাকে হিংস ভাবে চেপে ধর ।
এরপর মুনকার নাকির এসে জিজ্ঞেস করে তাকে উঠিয়ে বর্ষায় । এরপর জিজ্ঞেস করে মান রাব্বু , সে কোন উত্তর দিতে পারেনা , আমতা আমতা করতে থাকে তাকে । তাকে বলা হয় মাদীনু আবারো সে আমতা আমতা করতে থাকে । কোন উত্তর দিতে পারে না । তাকে প্রশ্ন করা হয় রাসূল (সাঃ) নিয়ে , তার ব্যাপারে কি জানে । সে অনিশ্চিত হয়ে আমি শুনেছিলাম লোকে এ এ বলে । তখন মুনকার-নাকির বলে তুমি মিথ্যা বলেছো । তার মাথায় শক্ত হাতুড়ি দিয়ে এতো জোরে আঘাত করা হবে যে তার চিৎকার শুনতে পাবে আশে পাশের প্রতিটি সৃষ্টি শুধু মানুষ আর জিন ব্যতীত । এরপর তাকে জান্নাতের একটি দৃশ্য দেখানো হবে । তাকে বলা হবে এটাই তার গন্তব্য হতে পারতো , যদি সে আল্লাহর আহবানে সাড়া দিতো । তারপর তাকে জাহান্নামের দৃশ্য দেখে বলা হবে সে নিজে এই গনন্তব্য টি সে নিজের জন্য বেছে নিয়েছে । জান্নাতে সে কি পেতে পারতো আর জাহান্নামে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে তা সরাসরি দেখার পর তার মনে এমন অকল্পনীয় অনুতাপ জন্মে নেয় যে আর কোন শাস্তি না থাকলো শুধু সে অনুতাপ টা তা আজাব হয়ে অসহনীয় হয়ে পড়তো । সে গন্তব্য আপনার হয়নি । আপনি শুয়ে আছেন আপনার প্রশস্ত কবরে । জান্নাতের আলোয় আলোকিত শুধুমাত্র আপনার রবের অসীম কারণে । এই সুখময় আবাসে আপনি অপেক্ষা করতে থাকেন যে দিনটির জন্য যেদিন সবাইকে একটি ময়দানে একত্রিত করা হবে ।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.