ঘূর্ণিঝড় | ঘূর্ণিঝড় কিভাবে সৃষ্টি হয় | ঘূর্ণিঝড় কেন হয় | Cyclone News | Cyclone


Video Link : https://youtu.be/ZWp0KRoujdY



 প্রকৃতির এক বিশাল  ধ্বংসাত্বক  ভৌগোলিক প্রক্রিয়া ঘূর্ণিঝড় । যে ঝড়ে বাতাস ও বজ্র প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে চলে তাকে ঘূর্ণিঝড় বলা হয় । পৃথিবীতে গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৮০ টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় এবং প্রতি বছর গড়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে মারা যায় । আজ আমরা ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে জানবো ।



ঘূর্ণিঝড় সাধারণত বিষুবরেখার আশেপাশে বা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল সমুদ্রে উৎপন্ন হয় । সমুদ্রে যে অঞ্চলে প্রায় দেড়শো ফুটের বেশি গভীর পর্যন্ত তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকে সেখানে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে । গ্রীষ্মকালে বিষুব অঞ্চলে প্রচন্ড উত্তাপের ফলে বাতাস গরম হয়ে উপরের দিকে উঠে যায় ।



  তখন সেখানে বায়ুচাপ ব্যাপক হারে কমে যায় একে নিম্নচাপ বলে ।  তখন বাতাসের শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য মেরু অঞ্চলের বায়ু দ্রুতবেগে নিম্নচাপ অঞ্চলে আসতে থাকে । এই বায়ুপ্রবাহ থেকে ভয়ঙ্কর কালো মেঘের সৃষ্টি হয় । পৃথিবীর ঘূর্ণনের প্রভাবে মেরু অঞ্চলের বাতাস সোজাসুজি প্রবাহিত না হয় দক্ষিণ গোলার্ধের বাম দিকে এবং উত্তর গোলার্ধের ডান দিকে বেঁকে যায় । সে কারণে দক্ষিণ গোলার্ধে ঘূর্ণিঝড় ঘড়ির কাটার দিকে এবং উত্তর গোলার্ধের ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরে  । 



প্রতিবছর যতগুলো ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় তার খুব সংখ্যক উপকূলে আঘাত হানে । অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রে উৎপন্ন হয়ে সমুদ্র শেষ হয়ে যায়  । কোন ঝড় বাতাস ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার বেগে ধাবিত হলে তাকে সাধারণত মৌসুমী ঝড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়  । যে সমস্ত ঝড় ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগ অর্জন করে সেগুলো মূলত ঘূর্ণিঝড়  । 


ঘন্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার গতিবেগে চলা ঝড়কে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে চিহ্নিত করা হয় । এবং ২২০ কিলোমিটার উপরে  তারচেয়ে ও বেশি গতিতে  প্রবাহিত ঘূর্ণিঝড় কে বলা হয় সুপার সাইক্লোন ।


ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র কে বলা হয় আই অফ দা সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের চোখ  । ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে এবং ঘূর্ণিঝড়ের বেস ১ হাজার  কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে । ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানার পর সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হল জলোচ্ছ্বাস । ঘূর্ণিঝড়ের তীব্র বাতাসের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি ২০ ফুট পর্যন্ত উপরে উঠে যেতে পারে । যার ফলে সমুদ্রতীরবর্তী ১০০ কিলোমিটার এলাকা পানিতে তলিয়ে যেতে পারে । ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যত মানুষের মৃত্যু হয় তার ৯০% মারা যায় জলোচ্ছ্বাসের কারণে । ঘূর্ণিঝড়ের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে মারাত্মক  ক্ষয়ক্ষতি হলেও এটি পৃথিবীর আবহাওয়া অত্যন্ত জরুরি একটি প্রক্রিয়া । ঘূর্ণিঝড়ের ফলে আমাদের গ্রহের তাপমাত্রা ভারসাম্য বজায় থাকে ।



পৃথিবী অধিক প্রবল ঘূর্ণিঝড় এলাকাগুলোকে সাতটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছতি। প্রতিটি অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় ।  অঞ্চল ভেদে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় কে আলাদা আলাদা নামে ডাকা হয় । ভারত মহাসাগর এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় কে বলা হয় সাইক্লোন  । উত্তর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় কে বলা হয় টাইফুন । 


এই সব সাধারণ নাম ছাড়াও প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের আলাদা আলাদা নাম দেওয়া হয় । সমুদ্রে কোন নিম্নচাপ অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার  অতিক্রম করলে তাকে একটি ঘূর্ণিঝড়ে নামে নামকরণ করা হয়  । 


Post a Comment

1 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.