VIDEO LINK : https://youtu.be/Hm7q0Az8ARc
বঙ্গোপসাগরের ছোট্ট একটি দ্বীপ সেন্টমার্টিন । এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ । বাংলাদেশের সমুদ্র প্রেমিকদের কাছে সেন্টমার্টিন অত্যান্ত প্রিয় কারণ বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে সেন্টমার্টিন এর মত দ্বিতীয় কোন জায়গা নেই । সে কারণে বাংলাদেশের সেরা পর্যটন আকর্ষণ মধ্যে নিঃসন্দেহে সেন্টমার্টিন থাকবে সবার শীর্ষে । কক্সবাজার জেলা সদর থেকে ১২০ কিলোমিটার এবং টেকনাফ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের বুকে জেগে উঠা ক্ষুদ্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন । এ দ্বীপের স্থায়ী নাম নারকেল জিঞ্জিরা । এখানে প্রচুর নারকেল গাছ দেখতে পাওয়া যায় । এছাড়া এ দ্বীপে প্রচুর কেয়া গাছ চোখে পড়বে । এ দ্বীপে লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ।
বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব দিকে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের অবস্থান । সর্বপ্রথম কবে এ দ্বীপে মানুষের পদচারণা ঘটেছিল সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যায় না । তবে ধারণা করা হয় ২৫০ বছর আগে দ্বীপটি আরব বণিকের নজরে আসে । আরব বণিকেরা চট্টগ্রাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্য করতে এসে এ দ্বীপে যাত্রাবিরতি করত । তারা এর নাম দিয়েছিল জাজিরা । পরবর্তীতে আশেপাশের মানুষের মুখে জাজিরার নামটি জিনজিরা নামে পরিবর্তিত হয়ে যায় । যতদূর জানা যায় ১৮৯০ সালে বাঙালি এবং রাখাইন ১৩ টি পরিবার সেন্টমার্টিন দ্বীপে বসবাস করে । তারা পেশায় ছিল মৎস্যজীবী । সেসব পরিবারের বংশ পরম্পরায় বাংলা বাঙালি এলাকায় পরিণত হয় ।
শুরুর দিকে এই দ্বীপে কেয়ার আর ঝাউ গাছ ছিল । বাঙালি জেলেরা এখানে নারকেল গাছ রোপণ করতে শুরু করে । এ গাছ একইসাথে স্বাদুপানির কষ্ট এবং প্রখর রোদের ছায়া প্রধানসহ সামুদ্রিক ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করে । এসব কারণে তৎকালীন বাসিন্দারা বেশি বেশি গাছ লাগাতে থাকে । একসময় পুরোটি দ্বীপ টি নারকেল গাছ দীপ প্রদানে পরিণত হয় । সে কারণেই অধিবাসীরা একে নারিকেল জিঞ্জিরা নামে ডাকতে শুরু করে । বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ নারকেল গাছ রয়েছে ।
১৯০০খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ভূ জরিপ দল এটি কে ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসেবে গ্রহণ করে ।এবং এটি ধর্মযাজক সেন্ট এর নাম অনুসারে এই দ্বীপের নাম রাখা হয় সেন্টমার্টিন । সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন প্রায় ১৭ বর্গকিলোমিটার । এটি উত্তর-দক্ষিণে লম্আটী। সেন্টমার্টিনের পশ্চিম- উত্তর পশ্চিম দিক জুড়ে রয়েছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার প্রবাল প্রাচীর । ভৌগোলিকভাবে এটি তিন অংশে বিভকটীণ। উত্তর অংশকে বলা হয় নারিকেল জিঞ্জিরা , দক্ষিণ অংশের অংশকে বলা হয় দক্ষিণপাড়া এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বিস্তৃত সম্পূর্ণ লেজের মতো এলাকা । এ লাকাকে বলা হয় ছেঁড়াদিয়া । দ্বীপে ভাটার সময় হেঁটে যাওয়া যায় তবে জোয়ারের সময় নৌকা বয়ে যেতে হয় । সেন্টমার্টিন জীব বৈচিত্র সবচেয়ে বেশি নমুনা লক্ষ্য করা যায় । প্রবাল, শামুক-ঝিনুক ও সামুদ্রিক শৈবাল এখানে দেখা যায় ।
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজে করে যেতে লাগে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘন্টা । তবে ভুল করেও টাকা বাঁচানোর জন্য ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যাওয়ার কথা ভাববেন না । জাহাজে বেশ কয়েকটি শ্রেণীভেদ টিকেট রয়েছে এসব টিকেটের দাম ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত । তবে উপরে বসে গেলে আপনি নাফ নদীর ও বঙ্গোপসাগরের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন । যত সামনে আগাবে নাফ নদীর সৌন্দর্য ততই তুলে ধরবে , আর জাহাজের দুপাশ দিয়ে অজস্র গাংচিল আপনাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে আপনার গন্তব্য পর্যন্ত ।
সেন্টমার্টিন এর আসল সৌন্দর্য তার সমুদ্রে । সমুদ্রের নামার আগে অবশ্যই জোয়ার ভাটার সময় জেনে নামবেন । সাঁতার না জানা থাকলে খুব বেশি দূর না যাওয়াই ভালো । চাইলে ব্রিজের উপরে রাখা চেয়ার ভাড়া নিয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে কিছুক্ষণ হারিয়ে যেতে পারেন সুবিশাল সমুদ্রের মাঝে । বিকেলে সাইকেল ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারেন । কারণ পায়ে হেঁটে পুরোটা সেন্টমার্টিন দেখা আসলেই বেশ কষ্টকর । সেন্টমার্টিনে কিছু নির্জন দ্বীপ রয়েছে যেখানে সচরাচর কেউ যায়না । কিন্তু আপনি যেতে পারেন । দ্বীপের দক্ষিণ দিক হয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট হাটলে এই সৈকত গুলো পাবেন । যেখানে আপনার একা একা ভালো সময় কাটবে । এটি ছেরা দ্বীপ নামে পরিচিত ।
প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য দেখতে গিয়ে প্রকৃতির কোন প্রকার ক্ষতি করবেন না । কারন আপনার বা আমার ছোটখাটো অবহেলার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে । বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন তার সৌন্দর্য ও জীব-বৈচিত্র্য সমুদ্র প্রেমিকদের কাছে বিশেষ মর্যাদার স্থান লাভ করে আছে । প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক লোক এখানে বেড়াতে আসে ।