Antarctica: The Frozen Continent | অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ | বরফের মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা |


 Video Link  : https://youtu.be/2Olmgl4gHhA


 কমলালেবুর মতো আকৃতি সম্পূর্ণ পৃথিবীর একদম তলদেশে অবস্থিত মহাদেশ টির নাম এন্টারটিকা । আর দ্বিমাত্রিক সমতলে আঁকা বিশ্ব মানচিত্রে এই মহাদেশের অবস্থান সর্বদক্ষিণে । স্বাভাবিকভাবেই পৃথিবীর চৌম্বকীয় আবেশের  দক্ষিণ মেরুটি ও এই মহাদেশেই  অবস্থিত । আয়তনের হিসেবে মহাদেশ গুলোর মধ্যে এন্টারটিকা পঞ্চম স্থানে রয়েছে । কিন্তু অন্যান্য অনেক হিসেবেই মহাদেশ গুলোর তালিকা প্রথম অবস্থানটি এই আন্টার্টিকার দখলে । এন্টারটিকা একাধারে বিশ্বের শীতলতম এবং শুষ্কতম মহাদেশ । তাছাড়া বিশ্বের বরফ হিসেবে  জমাটবদ্ধ সুপেয় পানির শতকরা প্রায় ৯০ ভাগই এই মহাদেশে  অবস্থিত । আন্টার্টিকার এমন অর্জনের তালিকা বেশ দীর্ঘ । অন্যদিকে বিশ্বের মহাদেশ গুলোর মধ্যে দুর্গম তম হওয়ায় এই এন্টারটিকা নিয়ে গুজবের ও কমতি নেই কোন । যেমন ধরুন পৃথিবী সৌরজগতের অন্য গ্রহ গুলোর মত গোলাকার নয়, এমন উদ্ভট দাবির সর্মথকরা মনে করেন । এন্টারটিকা মহাদেশ আসলে পুরো পৃথিবী কে ঘিরে রাখা একটি বরফের দেওয়াল মাত্র ।  তবে এ ধরনের বিশ্বাস এবং বক্তব্য আন্টার্টিকা এবং পৃথিবী সম্পর্কে নিজের অজ্ঞতা বহিঃপ্রকাশ । দুর্গম এবং রহস্যময় এই এন্টারটিকা মহাদেশ সম্পর্কে পরীক্ষিত তথ্য নিয়ে আমাদের আজকের এই লেখা । 




পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চতম , শীতলতম এবং শুষ্কতম মহাদেশ এন্টার্কটিকা । এ মহাদেশের  পরিবেশ এতই দুর্গম যে এখানে কোন মানুষের পক্ষে স্থায়ী ভাবে বসবাস করা সম্ভব নয় । আয়তনের দিক থেকে এশিয়া, আফ্রিকা , আমেরিকা এবং উত্তর আমেরিকার পরেই অবস্থান আন্টার্টিকা । সাউদান সাগর দ্বারা বেষ্টিত এন্টারটিকা মহাদেশের মোট আয়তন ১ কোটি ৪২ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার বা ৫৫ লাখ বর্গ মাইল । অর্থাৎ আয়তনের হিসেবে এন্টারটিকা অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের প্রায় দ্বিগুণ , আর যুক্তরাষ্ট্রের দেড় গুণ বড় । আয়তনের হিসেবে পঞ্চমে থাকা এই মহাদেশের প্রায় পুরোটাই বরফের চাদরে ঢাকা । এন্টারটিকা স্থলভাগের উপর এই বরফের উচ্চতা কোন কোন জায়গায় প্রায় তিন মাইল । তবে আন্টার্টিকায় বরফের গড় উচ্চতা প্রায় দুই কিলোমিটার বা সাড়ে ছয় হাজার ফুট ।





এন্টারটিকা মহাদেশের বর্তমান চেহারা দেখে মনে হতে পারে এটি হয়তো অনন্ত কাল থেকে বরফ যুগে বসবাস করছে । কিন্তু ১৬ কোটি বছর আগেও এই মহাদেশটিতে অবস্থান ছিল বিষুব রেখার কাছাকাছি ।  এ সময় পৃথিবীর সবগুলো মহাদেশ প্যানজিয়া  নামক একটি সুপার কন্টিনেন্টাল অংশ ছিল । কখন এন্টারটিকা ছিল গণভবনে ঢাকা  যেখানে সকল ডাইনোসর ঘুরে বেড়াতো । এখন থেকে ১৬ কোটি বছর প্যানজিয়া ভেঙে এন্টারটিকা মহাদেশ দক্ষিণ মুখে যাত্রা শুরু করে । এরপর আরও প্রায় ১২ কোটি এই মহাদেশের নানা প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণী বিচরণ ছিল । যদিও এর মধ্যে এক উল্কাপিন্ডের আঘাতে পৃথিবী থেকে সব স্থলচর এবং উভচর প্রজাতির ডাইনোসরের বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল । বিজ্ঞানীদের হিসেব অনুযায়ী আন্টার্টিকা মহাদেশ প্রথম বরফ জমার শুরু হয় আনুমানিক সাড়ে তিন কোটি বছর আগে । তবে বর্তমান চেহারার সময় লাগে আরো অন্তত দুই কোটি বছর । তবে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে পুরোপুরি বরফে ঢেকে যাওয়ার পর একাধিক বার বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে এন্টারটিকা সব বরফ গলে যাওয়া ঘটনাও ঘটেছে । 





পৃথিবীতে স্থল ভাগ গুলোর মধ্যে এন্টারটিকা মানুষের নজরে এসেছিল সবার পরে ।  বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এই মহাদেশটি আবিষ্কারের কৃতিত্ব একেবারেই উল্টো দিকে উত্তর মেরুর কাছাকাছি অবস্থিত দেশ রাশিয়ার দখলে রয়েছে । ১৮২০ সালে রুশ ২ অভিযাত্রী ফেবিয়াল গটলিভ এবং মিখাইলেন লান্ডলিভ আবিষ্কার করেন । ১৮২০সালে এন্টারটিকা মহাদেশ আবিষ্কার এরপর আরো ৭৫ বছর এই মহাদেশের স্থল ভাগে কোন মানুষের পায়ের ছাপ পড়ে নি । এর মূল কারণ আন্টার্টিকার দূরত্ব এবং দুর্গম আবহাওয়া । শেষ পর্যন্ত ১৮৯৫ সালে নরওয়ের একদল অভিযাত্রী প্রথমবারের মতো এনটারটিকা মহাদেশ অবতরণ করেন । তবে এই মহাদেশের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আবিষ্কারের প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত আছে । বরফে ঢাকা বিভিন্ন আগ্নেয়গিরি কথা বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন ২০১৩ সালে। পৃথিবীর মহাদেশ গুলোর মধ্যে একমাত্র এন্টারটিকা কোন স্থানীয় মানুষের বসবাস নেই । তাই এখানে কোনো জলপথ, জাতি বা রাষ্ট্র গড়ে ওঠেনি। তবে এই মহাদেশটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় পরিচালিত হয় । ১৯৬৯ সালে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী এন্টারটিকা মহাদেশ শুধুমাত্র গঠনমূলক বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা যাবে । সেক্ষেত্রে ও এমন কোন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালানো যাবে না যার ফলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিবেশ এবং জীববৈচিত্রের কোন ক্ষতি হয় ।





আন্টার্টিকা মহাদেশ কে বিজ্ঞানীরা দুই ভাগে ভাগ করেছেন । এ মহাদেশের এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত বিস্তৃত ওয়েস্টএন্টারটিকা ।  আর পূর্ব  ইস্ট আন্টার্টিকা ওয়েস্ট এন্টারটিকা  পশ্চিম গোলার্ধে  আর ইস্ট আন্টার্টিকা পূর্ব গোলার্ধে । আয়তনের বিচারেইস্ট আন্টার্টিকা পশ্চিম অংশের প্রায় ১০ গুণ বড় । এন্টারটিকা মহাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল এবং দুর্গন্ধ মহাদেশ । এখনো পর্যন্ত এই মহাদেশের ধারণকৃত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল - ৭৯ দশমিক 2 ডিগ্রি সেলসিয়াস । তবে সাধারণত এই মহাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ৮০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছাকাছি হয়ে থাকে । এন্টারটিকা মহাদেশের গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪ মিলিমিটার । অর্থাৎ আন্টার্টিকার তুলনায় সাহারা মরুভূমিতে দ্বিগুণ বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে । এ কারণে এন্টারটিকা বিশ্বের বৃহত্তম মরুভূমি । এন্টারটিকা মহাদেশ মানববসতি শূন্য হলেও জীব-বৈচিত্র বিহীন নয় । এখানে একাধিক প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী বসবাস করে এদের মধ্যে নীল তিমি দানবীয় স্কুইড বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।  এছাড়া পেঙ্গুইন  রয়েছে ।





বিশ্বের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক এর ভূমিকা পালন করে এই এনটারটিকা মহাদেশ । এ কারণেই মহাদেশকে বলা হয় পৃথিবীর ডিপ ফ্রিজ । এ  ছাড়া  পৃথিবীর সঞ্চিত সুপেয় পানির ৯০ ভাগ মহাদেশের বরফ হিসাবে জমা আছে  । সমস্যা হল মানব সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের মত গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ অসংখ্য জনক হারে বেড়ে চলেছে । এর ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব পড়েছে সুদূর আন্টার্টিকাতে ও । পশ্চিম আন্টার্টিকায় বরফ বেশি ভঙ্গুর হওয়ায় এখানে এরি  মধ্যে বিপুল পরিমাণ বরফ সাগরের পানিতে মিশে গেছে ।বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ১ শতকের মধ্যে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার বরফ একইভাবে গলে সাগরের পানিতে মিশে যাবে । কিন্তু আন্টার্টিকা মহাদেশের বরফ গলে গেলে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ২০ মিটার বা ৬৫ ফুটের মতো বৃদ্ধি পাবে। ফলে উপকূলীয় সব জনপদই বিলীন হয়ে যাবে ।

Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.