Full Video link : https://youtu.be/mNMv1LckAcw
পৃথিবীর মোট আয়তনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ হচ্ছে আটলান্টিক মহাসাগর । আটলান্টিক পৃথিবীর দ্বিতীয় মহাসাগর । আটলান্টিক মহাসাগরের আয়তন ১০ কোটি ৬৪ লাখ ৬০ হাজার বর্গ কিলোমিটার । এর গড় গভীরতা ১০৯২৫ ফুট । উত্তর আমেরিকা , দক্ষিণ আমেরিকা , ইউরোপ , এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশের ১৩৩ দেশের বেশি আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত । চারটি মহাদেশ জুড়ে বিস্তৃত আটলান্টিক মহাসাগর বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আটলান্টিক মহাসাগরের রহস্যময় বৈচিত্র্যতা বিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাছে এখনও এক বিস্ময় । আটলান্টিক তীরে ইউরোপ ও আমেরিকার মতো বিশ্ব পরাশক্তিদের অবস্থান হওয়ায় এই সাগরের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম ।
ধারণা করা হয় জুরাসিক যুগ থেকেই আটলান্টিক মহাসাগরের গঠন শুরু হয় । আটলান্টিক পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর । আটলান্টিক মহাসাগর পৃথিবীর পৃষ্ঠে পাঁচ ভাগের এক ভাগ জায়গা জুড়ে অবস্থিত । পৃথিবীর পাঁচটি মহাদেশের প্রায় ১৩৩ দেশ এই মহাসাগরে অবস্থিত । এই মহাসাগরের উপকূলীয় এলাকার আয়তন প্রায় এক লক্ষ ১১ হাজার ৮৬৬ বর্গ কিলোমিটার । আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমে রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ এবং পূর্বদিকে ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশ । মহাসাগর টি উত্তর-দক্ষিণে উত্তর মহাসাগর থেকে দক্ষিণ মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত । আটলান্টিক মহাসাগর ডেনমার্ক প্রণালী , গ্রীনল্যান্ড সাগর ,নরওয়ে নরওয়েজিয়ান সাগর ও বারেন্টস আর সাগরের মধ্যে দিয়ে আর টিক মহাসাগর এর সাথে সংযুক্ত হয়েছে ।
আটলান্টিক মহাসাগরের প্রবেশের জন্য পথ হিসেবে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো জার্মানির কেল খাল, ডেনমার্ক সুইডেন এর মধ্যবর্তী ওসোন প্রণালী , তুরস্কের ফসফরাস প্রণালী, স্পেনও মরক্কের মধ্যবর্তী জিব্রাল্টার প্রণালী এবং কানাডার সেন্টালরেন্ট সমুদ্র পথ । সমুদ্রপথে ইউরোপের সাথে আমেরিকার পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে আটলান্টিক মহাসাগর এর বিকল্প নেই । একইভাবে এশিয়া এবং আফ্রিকা আমেরিকার সাথে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আটলান্টিক মহাসাগর অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
আটলান্টিক মহাসাগর কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বহু বন্দর । এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো স্পেনের বার্সেলোনা , ডেনমার্ক এর কোপেনহেগেন , জার্মানির হামবুল , গ্রেট বৃটেনের লন্ডন , পর্তুগালের লিস্ট ব্যান্ড , নরওয়ের অসলো , কানাডার মন্টিনা , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ইত্যাদি ছাড়াও আরো অসংখ্য বন্দর আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে গড়ে উঠেছে । ১৯১২ সালে বিখ্যাত টাইটানিক জাহাজ ডুবির ঘটনা আটলান্টিক মহাসাগরে ঘটেছে । প্রথম যে মহাসাগর জাহাজ ও বিমানে পাড়ি দেওয়া হয় সেটি ও আটলান্টিক মহাসাগর । বিমান নিয়ে আটলান্টিক মহাসাগর অতিক্রম করা হয় ১৯১৯ সালে , তখন সময় লেগেছিল ১৬ ঘন্টা ।
আটলান্টিক মহাসাগরের পানি সময় ও স্থানভেদে বরফে পরিণত হয় । অক্টোবর থেকে জুন মাস পর্যন্ত আটলান্টিক মহাসাগরের সাগর , বাল্টিক সাগর ও ডেনমার্ক প্রণালী বরফে ঢাকা থাকে । আটলান্টিক মহাসাগরের সবচেয়ে বড় দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড । আটলান্টিক মহাসাগরের বেশকিছু সাগর ও উপসাগর রয়েছে । এদের মধ্যে বাল্টিক সাগর , কৃষ্ণ সাগর ,উত্তর সাগর , নরজিয়ান সাগর ,ভূমধ্য সাগর এবং মেক্সিকো উপসাগর অন্যতম । আমাজন নদী ,মিসিস্মৃতি নদী , রিয়াদে প্লাতা নদী , নাইজার নদী , কঙ্গো নদী ,রায়েন নদীর মতো প্রধান প্রধান নদীগুলোর পানি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই মহাসাগরে পতিত হয় ।
আটলান্টিক মহাসাগর প্রাচুর্য তার জন্য বিখ্যাত । আটলান্টিক তীরবর্তী দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে মহাসাগর টি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে । উত্তর সাগর , ক্যারিবীয় সাগর ও মেক্সিকো উপসাগরের প্রাকৃতিক গ্যাস অপরিশোধিত তেল এবং মূল্যবান পাথরের প্রাচুর্যতা রয়েছে । কিউবা বা ফালিডারা দ্বীপপুঞ্জের মধ্যবর্তী ফ্লোরিডা প্রণালী পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য বিখ্যাত ।দুটি সাগর অথবা দুইটি বিশাল জলরাশি কে সংযুক্তকারী সরু জলপথকে প্রণালী বলা হয় । আটলান্টিক মহাসাগরে একাধিক প্রণালী রয়েছে । এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ডেনমার্ক প্রণালী , মেজেনাল প্রণালী , ফ্লোরিডা প্রণালী ও ডোভার প্রণালী । ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে ডোভার প্রণালী বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত সমুদ্র প্রণালী ।