১৬ ই ডিসেম্বর— আমাদের জাতীয় ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক দিন। বছর ঘুরে বিজয়ের এই দিনটা যতটা না উদযাপনের তার থেকে বেশি জাতি হিসাবে আত্মোপলব্ধির। স্বাধীনতা অর্জন করেও, স্বার্থপরতা ও চিন্তার দাসত্ব থেকে আমরা মুক্তি পাইনি আজও। দিনে দিনে বৈষম্য বেড়েছে। হীনমন্যতা, অসহনশীলতা, অনিয়ম আর দূর্নীতি যেন আজও আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।তাই, স্বাধীনতা অর্জিত হলেও, লড়াই থামেনি আমাদের এখনো। সম্প্রীতির বাংলাদেশ, মানবিক বাংলাদেশ আর সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়তে— লড়ে যেতে হবে এ জাতিকে শেষ পর্যন্ত। সেই সাথে বেরিয়ে আসতে হবে সকল উস্কানিমূলক ও আক্রমণাত্মক আভ্যন্তরীণ কোন্দল আর হিংসাত্মক মনোভাব থেকে।জাতীয় ঐক্য ছাড়া স্বপ্নের বাংলাদেশ তৈরী করা কি আদৌ সম্ভব ? অথচ আমরা বিভাজনে ব্যস্ত। ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ, রাষ্ট্র ও সভ্যতা বিনির্মাণ করতে— জাতি হিসেবে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একে অন্যের প্রতি সাম্প্রদায়িক তকমা লাগানো এবং কাদা ছোড়াছুড়ি থামাতে হবে। এধরণের সহিংস মনোভাবে সঙ্কট আরো প্রকট হচ্ছে। দরকার সমন্বিত প্রয়াস। হৃদয়ে বাংলাদেশকে ধারণ করে, রাজনৈতিক বৈচিত্রের মাঝেও দেশ গড়ার এক ও অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যেতে হবে সবাইকে। স্বাধীন ভূখণ্ড মহান আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে এক বিরাট নেয়ামত। এটা আমরা অনেকেই টের পাইনা। এব্যাপারটি উপলব্ধি করতে হলে খুব বেশীদূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশে অবস্থিত প্রায় এক মিলয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দিকে তাকালেই সেটা বুঝা যায়। আহা! নিজ জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে ভিনদেশের আশ্রয় শিবিরে দিনাতিপাত করাটা যে কতোটা নির্মম ও বেদনাদায়ক তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানে। পাশাপাশি, স্বাধীন সার্বভৌম একটি ভূখণ্ডের জন্য ফিলিস্তিন ও কাশ্মীরের ভাইবোনদের দীর্ঘ সংগ্রাম আর করুণ আর্তনাদও আমাদের সে কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
তাই, আজকের এ মহান বিজয় দিবসে বিনয়াবনত চিত্তে শুকরিয়া জানাই আল্লাহর দরবারে এবং বিজয়ের কারিগর সকল শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধার প্রতি জানাই হৃদয় নিংড়ানো দু’আ, ভালোবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধা।