মৃত্যু নিয়ে সুন্দর একটি লেখা । এক মুসলিম ব্যক্তি মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া কিছু অনুভূতি।


 মৃত্যু নিয়ে সুন্দর একটি লেখা । এক মুসলিম ব্যক্তি মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া কিছু অনুভূতি। 


মৃত্যু নিয়ে আমি কোনো দুশ্চিন্তা করবো না , আমার মৃতদেহের কি হবে সেটা নিয়ে কোন অযথা আগ্রহ দেখাবো না । আমি জানি আমার মুসলিম ভাইয়েরা করণীয় সবকিছু যথাযথভাবে করবে ।


তারা প্রথমে আমার পরনের পোশাক খুলে আমাকে বিবস্ত্র  করবে ,আমাকে গোসল করাবে , তারপর তারা আমাকে কাফন পড়াবে , আমাকে আমার বাসগৃহ থেকে বের করবে । আমাকে নিয়ে তারা আমার নতুন বাসগৃহে কবরের দিকে রওনা হবে । আমাকে বিদায় জানাতে বহু মানুষ সমাগম হবে । অনেক মানুষ আমাকে দাফন দেওয়ার জন্য তাদের প্রাত্যাহিক কাজকর্ম কিংবা সভার সময়সূচী বাতিল করবে ।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে অধিকাংশ মানুষ এরপরের দিনগুলোতে আমার এই উপদেশগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করবেনা । আমার ব্যক্তিগত জিনিসের উপর আমি অধিকার হারাবো । আমার চাবির গোছা গুলো , আমার বইপত্র , আমার ব্যাগ , আমার জুতো গুলো হয়তো আমার পরিবারের লোকেরা আমাকে উপকৃত করার জন্য আমার ব্যবহারের জিনিসপত্র দান করে দেওয়ার বিষয়ে একমত হবে ।


এ বিষয়ে তোমরা নিশ্চিত থেক যে এই দুনিয়া তোমার জন্য দুঃখিত হবে না অপেক্ষা করবে না ।এই দুনিয়ার ছুটে চলা এক মুহূর্তের জন্যও থেমে যাবে না । অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই চলতে থাকবে । আমার দায়িত্ব থাকা কাজ অন্য কেউ সম্পাদন করা শুরু করবে । আমার ধন সম্পদ বিধিসম্মত ভাবে আমার ওয়ারিশদের হাতে চলে যাবে । অথচ এর মাঝেই এই সম্পদের জন্য আমার হিসাব-নিকাশ আরম্ভ হয়ে যাবে । ছোট এবং বড় অনুপরিমান সবকিছুর হিসাব ।


আমার মৃত্যুর পর সর্বপ্রথম যা হারাতে হবে তা আমার নাম । কেননা যখন আমি মৃত্যুবরণ করবো তারা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলবে কোথায় লাশ ।কেউ আমাকে নাম ধরে সম্বোধন করবে না । যখন তারা আমার জন্য জানাযার নামাজ আদায় করবে , বলবে  জানাযাহ নিয়ে আসো, তারা আমাকে নাম ধরে সম্বোধন করবে না ।


আর যখন তারা দাফন শুরু  করবে , বলবে মৃত দেহকে কাছে আনো , তারা আমার নাম ধরে ডাকবে না ।

এজন্যই দুনিয়ায় আমার বংশপরিচয় , আমার গোত্র পরিচয় , আমার পদমর্যাদা এবং আমার খেতি কোন কিছুই আমাকে যেন ধোঁকায় না ফেলে । এই দুনিয়ার জীবন কতই না তুচ্ছ , আর যা কিছুর সামনে আছে তা কতই না গুরুতর বিষয় । অতএব শোনো তোমরা যারা এখনো জীবিত আছো জেনে রাখো তোমার মৃত্যুর পর তোমার জন্য তিন ভাবে দুঃখ করা হবে ।


১) যারা তোমাকে বাহ্যিকভাবে চিনত তারা তোমাকে বলবে হতভাগা ।


২) তোমার বন্ধুরা বড়জোর তোমার জন্য কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন দুঃখ করবে , তারপর তারা আবার        গল্পগুজব বা হাসি-ঠাট্টা তে মত্ত হয়ে যাবে ।


৩) যারা খুব গরিব ভাবে দুঃখিত হবে , তারা তোমার পরিবারের মানুষ্‌ তারা এক সপ্তা দুই সপ্তাহ এক মাস দুই মাস কিংবা বড়জোর এক বছর দুঃখ করবে , তারপর তারা তোমাকে স্মৃতির মণিকোঠায় যত্ন করে রেখে দেবে ।


মানুষের মাঝে তোমাকে নিয়ে গল্প শেষ হয়ে যাবে , অতএব তোমার জীবনের নতুন গল্প শুরু হবে আর তা হলো পরকালের জীবনের বাস্তবতা । তোমার নিকট থেকে নিঃশেষ হয়ে যাবে তোমার সোন্দর্য ,ধন-সম্প্‌  সুস্বাস্থ্য , সন্তান- সন্তাদি , বসতবাড়ি  ,প্রসাদসমুহ , জীবনসঙ্গী  । তোমার নিকট তোমার ভালো অথবা মন্দ আমল ব্যতীত আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না ।


বস্তুত এই জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে তোমার গভীরভাবে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন । এজন্য তুমি যত্নবান হও । ফরয ইবাদত গুলোর প্রতি , নফল ইবাদত গুলোর প্রতি , গোসল সাদাকার প্রতি , ভালো কাজের প্রতি , রাতের নামাজের প্রতি , যেন তুমি নিজেকে রক্ষা করতে পারো ।


এই লেখাটির মাধ্যমে তুমি মানুষকে উপদেশ দিতে পারো , কারন তুমি এখনো জীবিত আছো্‌ , এর ফলাফল আল্লাহর ইচ্ছায় তুমি কিয়ামত দিবসে মিজানের পাল্লায় দেখতে পাবে । আল্লাহ বলেন আর স্মরণ করিয়ে দাও , নিশ্চয়ই এই স্মরণ জন্য উপকারী । তুমি কি জানো কেন মৃত ব্যক্তি সাদাকাহ প্রদানের আকাঙ্ক্ষা করবে , যদি আর একবার দুনিয়ার জীবনে ফিরতে পারতো ।আল্লাহ বলেন ঃ:(হে আমার রব  ) যদি তুমি আমাকে আর একটু সুযোগ দিতে দুনিয়ার জীবনে ফিরে যাবার , তাহলে আমি অবশ্যই সাদাকাহ প্রদান করতাম । তারা বলবে না , ওমরা পালন করতাম অথবা সালাত আদায় করতাম অথবা রোজা রাখতাম ।


আলেমগণ বলেন মৃত ব্যাক্তিরা সাদাকাহর কথা বলবে , কারন তারা সাদাকাহ প্রদানের ফলাফল তাদের মৃত্যুর পর দেখতে পাবে । আর গুরুত্ববহ এই সাদাকাহর কাজটি তুমি এই কথাগুলো ছড়িয়ে দিয়ে মাত্র ১০ সেকেন্ড সময় ব্যয় করে করতে পারো । যদি তোমার উদ্দেশ্য হয় এর মাধ্যমে মানুষকে উপদেশ প্রদান করা কারণ উত্তম কথা হলো এক ধরনের সাদাকাহ । 


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.